খনিজ অধাতু

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - রসায়ন - খনিজ সম্পদ: ধাতু অধাতু | NCTB BOOK

খনি থেকে যে অধাতুসমূহকে পাওয়া যায় তাদেরকে খনিজ অধাতু বলা হয়। সালফার একটি খনিজ অধাতু এবং খনি থেকে সালফার সংগ্রহ করা হয়।
 

সালফার
সালফার হলুদ বর্ণের পদার্থ। সালফারের খনি মাটির অনেক নিচে থাকে। ফ্রাশ (Frasch) পদ্ধতিতে সালফারের খনি থেকে সালফারকে নিষ্কাশন করা হয়। এক্ষেত্রে মাটির অনেক নিচে সালফারের খনির মধ্যে তিনটি এককেন্দ্রিক পাইপ প্রবেশ করানো হয়, যাকে ফ্লাশ পাইপ বলে। সালফার 115° C তাপমাত্রার গলে যায়। এজন্য সালফারের গলনাঙ্কের চেয়ে বেশি তাপমাত্রার গরম পানি (সুপার হিটেড ওয়াটার) তিনটি এককেন্দ্রিক নলের বাইরের পাইপ দিয়ে প্রবাহিত করা হয় যাতে পরম পানির তাপমাত্রার সালফার পলে যায়। আমরা জানি এক বায়ুমণ্ডলীয় চাপে পানির স্ফুটনাঙ্ক 100° C. কিন্তু চাপ বাড়ালে পানির স্ফুটনাঙ্ক বৃদ্ধি পায়। এভাবে অতিরিক্ত চাপে 100° C থেকে 374°C তাপমাত্রার মধ্যবর্তী যেকোনো তাপমাত্রার পানিকে সুপার হিটেড ওয়াটার বলে। এবার সবচেয়ে ভিতরের পাইপ দিয়ে 20-22 বায়ুমণ্ডল চাপের বাতাস প্রবাহিত করা হয়। একদিকে বাইরের পাইপ দিয়ে পরম পানির চাপে এবং সবচেয়ে ভিতরের পাইপ দিয়ে বাতাসের চাপে গলিত সালফার মাঝের পাইপ দিয়ে মাটির উপরে উঠে এসে বাইরের পাত্রে জমা হয়।
 

সালফারের ব্যবহার
সালফার বিভিন্ন শিল্পকারখানার প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হয়। যেমন—

(i) সালফিউরিক এসিড প্রস্তুতিতে সালফার ব্যবহার করা হয়। 

(ii) রাবারকে টেকসই করার জন্য রাবারের মধ্যে সালফার যোগ করা হয়। একে রাবারের ভলকানাইজিং বলে। 

(iii) সালফানাইড দ্বারা বিভিন্ন প্রকার ওষুধ তৈরি করা হয়। সালফানাইড ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস ব্যবহার করা করে।
 

সালফানাইড প্রস্তুতিতে সালফার ব্যবহার করা হয়। 

 

সালফারের যৌগ
সালফারের কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ যৌগ নিচে আলোচনা করা হলো
 

সালফার ডাই-অক্সাইড
সালফারকে বাতাসের অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে সালফার ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন করে৷
                  S + O 2            SO₂
 

সালফার ডাই অক্সাইড গ্যাস অত্যন্ত বিষায়। এই গ্যাস নাক বা মুখের মধ্য দিয়ে শরীরে প্রবেশ করলে শরীরের ক্ষতি হয়। SO2 গ্যাস চোখে প্রবেশ করলে চোখ জ্বালাপোড়া করে। কয়লার মধ্যে যদি সালফার থাকে বা পেট্রোলিয়াম তেলের মধ্যে যদি সালফার থাকে তবে কয়লা বা তেলকে বাতাসে পোড়ালে কয়লা বা তেলের মধ্যের সালফার অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে তীব্র ঝাঁজালো SO: প্যাস উৎপন্ন হয়। এই গ্যাস বায়ুমণ্ডলে চলে যায়। যখন বৃষ্টি হয় তখন এই গ্যাস পানির সাথে বিক্রিয়া করে সালফিউরাস এসিড (H2SO3) উৎপন্ন করে যেটি বৃষ্টির পানির সাথে মাটিতে পড়ে। এই বৃষ্টিকে এসিড বৃষ্টি বলে।
 

 SO₂ + H₂O             H₂SO3
 

সালফিউরিক এসিড
সালফিউরিক এসিড অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্য অপেক্ষা সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় বলে সালফিউরিক এসিডকে রাসায়নিক দ্রব্যের রাজা বলা হয়। শিল্পকারখানার কঠিন সালফার থেকে সালফিউরিক এসিডকে প্রস্তুত করা হয়। এই পদ্ধতিকে স্পর্শ পদ্ধতি বলে। স্পর্শ পদ্ধতি: স্পর্শ পদ্ধতিটি কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়।

 

ধাপ 1: প্রথমে একটি চুল্লিতে সালফার (S) এবং শুষ্ক বায়ু (যে বায়ুতে জলীয় বাষ্প নেই) প্রবাহিত করা হয়। এই চুল্লিতে সালফার এবং অক্সিজেন বিক্রিয়া করে সালফার ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন করে। 

S + O 2          SO2

ধাপ 2:  SO2 গ্যাসের সাথে কিছু O2 গ্যাস একটি চুল্লিতে প্রেরণ করা হয়। এই চুল্লির তাপমাত্রা থাকে 450°C – 550°C এবং প্রভাবক থাকে ভ্যানাডিয়াম পেন্টা-অক্সাইড। এই চুল্লিতে উচ্চ তাপমাত্রায় প্রভাবকের উপস্থিতিতে SO2 এবং O2 বিক্রিয়া করে সালফার ট্রাই-অক্সাইড উৎপন্ন করে।
 

2SO2 + O2     → 2SO3

ধাপ 3: উৎপন্ন SO3 এর সাথে H2O এর সংস্পর্শ ঘটলে H2SO4 তৈরি হবে। কিন্তু SO3 এর সাথে সরাসরি H2O বিক্রিয়ায় বাষ্পীয় H2SO, তৈরি হয় যা ঘন কুয়াশার মতো অবস্থা তৈরি করে। এতে শিল্পকারখানায় কাজের অসুবিধা হয়। এছাড়া এই বাষ্পীয় H2SO4 কে ঘনীভূত করে তরল H2SO4 এ পরিণত করা কঠিন। এজন্য SO3 কে প্রথমে গাঢ় H2SO4 এর মধ্যে শোষণ করিয়ে ধূমায়মান সালফিউরিক এসিড তৈরি করা হয়। (ধূমায়মান সালফিউরিক এসিডকে অলিয়াম বলে। এর সংকেত H2S2O7)
 

H2SO4 + SO3            H2S207

 

ধূমায়মান সালফিউরিক এসিড এর সাথে পানির বিক্রিয়া ঘটিয়ে তরল সালফিউরিক এসিড তৈরি করা হয়। 

H2S2O7 + H2O                       2H2SO4

 

সালফিউরিক এসিডের ধর্ম
 

এসিড ধর্ম: লঘু H2SO4 বা গাঢ় H2SO4 কোনো ক্ষারের সাথে বিক্রিয়া করে লবণ এবং পানি তৈরি করে। একে H2SO4 এর এসিড ধর্ম বলে। যেমন: সালফিউরিক এসিড ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড এর সাথে বিক্রিয়া করে ক্যালসিয়াম সালফেট লবণ এবং পানি উৎপন্ন করে।

জারণ ধর্ম (Oxidation Property ) 

H2SO4 এর মধ্যে অনেক বেশি পানি থাকলে অর্থাৎ পানির মধ্যে H2SO4 দিলে সেই H2SO4 কে লঘু H2SO4 এসিড বলে। লঘু H2SO4 এর জারণ ধর্ম নেই। কিন্তু যে H2SO4 এর মধ্যে পানি কম পরিমাণে থাকে সেই H2SO4 গাঢ় H2SO4 বলে। গাঢ় H2SO এর জারণ ধর্ম আছে। গাঢ় H2SO4 কপারকে জারিত করে কপার সালফেটে পরিণত করে এবং নিজে বিজারিত হয়ে সালফার ডাই- অক্সাইড এবং পানি উৎপন্ন করে।

2H2SO4 (গাঢ়) + Cu              CuSO4 + SO2 + 2H2O
 

নিরুদন ধর্ম  (The Dehydrating Property) 

যে পদার্থ কোনো যৌগ থেকে পানি শোষণ করে সেই পদার্থকে নিরুদক বলে। পানি শোষণ করার ধর্মকে নিরুদন ধর্ম বলে। লঘু H2SO4 এর কোনো নিরুদন ধর্ম নেই, কিন্তু গাঢ় H2SO4 এর নিরুদন ধর্ম আছে। গাঢ় H2SO4 চিনি (C12H22O11) থেকে পানি শোষণ করে। এজন্য গাঢ় H2 SO4 কে নিরুদক বলে।
 

C12H22O11 + H2SO4                12C + H2SO4.11H₂O

Content added By

আরও দেখুন...

Promotion

Promotion